শুক্রবার দুপুরে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার পদ্মা হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল অ্যান্ড ট্রমা সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকার মীর সিরামিক কারখানার টেকনিশিয়ান পদে চাকরি করেন ঝালকাঠির রমানাথপুর গ্রামের আবদুল লতিফ তালুকদারের ছেলে কুদ্দুস তালুকদার।
কাজ করতে গিয়ে বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে মাংসের ভেতর ছোট্ট এক টুকরো লোহা ঢুকে গেছে আবদুল কুদ্দুস তালুকদারের। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে স্ত্রীর কাঁধে হাত দিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন তিনি। ৮ বছরের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়েই আহত স্বামীকে সামলে নিচ্ছিলেন স্ত্রী রুবি আক্তার। এসময় সামান্য কারণে স্ত্রী ও শিশুপুত্রের সামনে চিকিৎসা নিতে আসা কুদ্দুসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘ পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী’। বেদম পিটুনি দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কুদ্দুসকে মেঝেতে ফেলে রাখে তারা। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি কুদ্দুসের স্ত্রী ও শিশুপুত্র রাহাত তালুকদার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কাজ করতে গিয়ে তার বাঁ হাঁটুর নিচের অংশে মাংসপেশিতে ছোট্ট এক টুকরা লোহা ঢুকে পড়ে। রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লোহার টুকরা বের করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন সেখানকার চিকিৎসক। আহত কুদ্দুস জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (অর্থোপেডিক ও সার্জন) ডা. মোফাখ্খারুল ইসলাম রানা শুক্রবার চেম্বার করেন মাওনার ওই হাসপাতালে। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই স্ত্রীর কাঁধে হাত দিয়ে কুদ্দুস চিকিৎসক ডা. মোফাখ্খারুল ইসলাম রানার কাছে আসেন। ৭শ টাকা ভিজিট পরিশোধ করে তার কাছে যান। কিন্তু কুদ্দুসের কোনো চিকিৎসা ওখানে হবে না বলে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. মোফাখ্খারুল ইসলাম রানার।

কুদ্দুসের স্ত্রী রুবি আক্তার জানান, যেহেতু ডাক্তার কোনো ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎসা দেননি সে কারণে বের হয়ে তার স্বামী ভিজিটের ৭শ টাকা ফেরত চান। এই অপরাধে স্ত্রী ও সন্তানের সামনেই প্রকাশ্যে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা কুদ্দুসের ওপর হামলা করে হাসপাতালের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। বেদম পিটুনি দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রাখে।এসময় আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে অন্য সব রোগী।এতে নেতৃত্ব দেন তুহিন আহমেদ। ভিজিটিং কার্ডে তিনি নিজের নামের পর ‘ ম্যানেজার ’ লিখে রেখেছেন। তার নেতৃত্বেই হাসপাতালের ভেতরে চলে এই হামলা।
এক পর্যায়ে কুদ্দুসের স্ত্রী ও সন্তানকে মারপিট করা হয় বলে তার শ্যালক আবদুল হান্নান অভিযোগ করেন। স্থানীয়রা জানান, শুধু শুক্রবার এ হাসপাতালে একদল সন্ত্রাসী ভাড়া করে আনা হয়। এ দিন রোগীর চাপ বেশি থাকে বলে এ ব্যবস্থা। যাতে কোনো রোগী কথা না বলতে পারে, অনিয়মের প্রতিবাদ না করতে পারে।

শ্রীপুর থানার এসআই আমজাদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে তিনি গিয়ে তদন্ত করেছেন। কুদ্দুস নামে এক রোগীকে মারপিট করা হয়েছে।

ডা. মোফাখ্খারুল ইসলাম রানাঘটনার পরপরই চেম্বার থেকে বেরিয়ে কুদ্দুসকে নিয়ে তার কক্ষে বসান।
বিনা পয়সায় পিজি হাসপাতালে কুদ্দুসের চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নেন পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে বিকেলের দিকে তাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পরপরই তুহিন ও তার সঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে যায়।

হাসপাতালের মালিক সেলিম বলেন, এটা একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত তুহিনকে হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী থাকে না।